
দুই জীবন,এক অঙ্গীকার পর্ব ৩
পঞ্চদশ অধ্যায়: সিদ্ধান্তের সন্ধিক্ষণ মাধুরী একা বসে আছেন। নন্দিনীর কথা তার মনে বারবার ঘুরপাক খাচ্ছে। “আপনি যদি তাকে ভালোবাসেন, তবে সবকিছু ভুলে যান। সমাজ নিয়ে চিন্তা করবেন কেন?” জীবনে বহু সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। ইশানকে কোলেপিঠে করে ছোট থেকে বড় করেছেন। তার জীবনের প্রতিটি অধ্যায়ে মাধুরীর ভূমিকা ছিল মা, অভিভাবক, সুরক্ষাকারীর। কিন্তু আজ, সেই ইশানের জন্য তার নিজের মনের সঙ্গে লড়াই করতে হচ্ছে। “আমার কি এই অধিকার আছে? সমাজ আমাকে কখনো গ্রহণ করবে না। ইশান? সে কি সত্যিই এই সম্পর্কের জন্য লড়াই করতে পারবে?” অন্যদিকে, ইশান মাধুরীর দ্বিধা বুঝতে পারছে। সে নন্দিনীকে ডেকে বলে, “আমি আর অপেক্ষা করতে পারছি না। মাধুরী
পঞ্চদশ অধ্যায়: সিদ্ধান্তের সন্ধিক্ষণ মাধুরী একা বসে আছেন। নন্দিনীর কথা তার মনে বারবার ঘুরপাক খাচ্ছে। “আপনি যদি তাকে ভালোবাসেন, তবে সবকিছু ভুলে যান। সমাজ নিয়ে চিন্তা করবেন কেন?” জীবনে বহু সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। ইশানকে কোলেপিঠে করে ছোট থেকে বড় করেছেন। তার জীবনের প্রতিটি অধ্যায়ে মাধুরীর ভূমিকা ছিল মা, অভিভাবক, সুরক্ষাকারীর। কিন্তু আজ, সেই ইশানের জন্য তার নিজের মনের সঙ্গে লড়াই করতে হচ্ছে। “আমার কি এই অধিকার আছে? সমাজ আমাকে কখনো গ্রহণ করবে না। ইশান? সে কি সত্যিই এই সম্পর্কের জন্য লড়াই করতে পারবে?” অন্যদিকে, ইশান মাধুরীর দ্বিধা বুঝতে পারছে। সে নন্দিনীকে ডেকে বলে, “আমি আর অপেক্ষা করতে পারছি না। মাধুরী যদি আমাকে কখনো না বলে দেয়, তবে হয়তো আমি ভেঙে পড়ব। আমি জানি, সে আমাকে ভালোবাসে। কিন্তু তার ভয়গুলো তাকে আটকে রেখেছে।” নন্দিনী কিছুক্ষণ চুপ থাকে, তারপর বলে, “তাহলে এবার ওকে বোঝাও যে তুমি সত্যিই তার পাশে থাকতে চাও। কোনো দ্বিধা ছাড়াই। ওকে সাহস দাও। সমাজের কাছে তোমাদের ভালোবাসার মূল্য প্রতিষ্ঠা করতে হলে তোমাকেই এগিয়ে যেতে হবে।” অনেক চিন্তা ভাবনার পর, মাধুরী পরদিন সন্ধ্যায় নন্দিনীর সঙ্গে একান্তে কথা বলেন। “নন্দিনী, তোমরা তরুণ। তোমাদের সামনে জীবন। কিন্তু আমার?” “আপনারও জীবন আছে, আন্টি। সেটা কখনো শেষ হয়ে যায়নি। সমাজের নিয়ম মানেই কি সবসময় সঠিক? যদি ইশান আপনার পাশে থাকতে চায়, তবে কেন আপনার ভয়?” মাধুরী নন্দিনীর কথাগুলো শুনে কিছুটা থেমে যায়। তার চোখে জল জমে, কিন্তু চুপ করে থাকেন। হঠাৎই ইশান এবার সরাসরি মাধুরীর সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। “মা, আমি আর অপেক্ষা করতে পারছি না। আপনি যদি আমাকে মেনে নিতে না চান, তবে বলুন। আমি সবকিছু ছেড়ে চলে যাব। কিন্তু আমি আপনাকে শুধু একজন মা হিসেবে নয়, আমার জীবনের সবকিছু হিসেবে দেখি। আপনি কি আমাকে সেই অধিকার দেবেন?” মাধুরী এবার আর নিজেকে আটকাতে পারেন না। তার চোখ থেকে টপটপ করে জল ঝরতে থাকে। “ইশান, আমি জানি না, এই সম্পর্ক কতটা সঠিক। কিন্তু আমি জানি, আমি তোমাকে হারাতে চাই না।” মাধুরী একটু অস্বস্তি বোধ করছেন, কিন্তু ইশান তাকে স্বাভাবিক করার জন্য তার হাত ধরে বলে, “আপনার ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আমি আছি আপনার পাশে। আর কিছু নিয়ে ভাবতে হবে না।” মাধুরী কিছু বলতে গিয়ে থেমে যায়। ইশান তার দিকে তাকিয়ে বলে, “আপনার মনে যা আছে, সব বলতে পারেন। আমি শুনতে চাই।” মাধুরী গভীর নিশ্বাস নিয়ে বলে, “ইশান, আমি শুধু ভয় পাচ্ছি। সমাজের কথা, তোমার ভবিষ্যৎ… আমার বয়স। এসব নিয়ে।” ইশান একটু হাসি দিয়ে বলে, “আপনি কি জানেন, এসব কিছুর থেকেও বড় একটা জিনিস আছে? সেটি হলো ভালোবাসা। আর আমি আপনাকে ভালোবাসি, মা। আপনি যদি আমাকে বিশ্বাস করেন, তবে আমরা সবকিছু পার করতে পারব।” মাধুরী এক মুহূর্তের জন্য নীরব থাকেন। তারপর ধীরে ধীরে বলেন, “আমি তোমার ভালোবাসা মেনে নিচ্ছি, ইশান। তবে আমি জানি না, সমাজ কীভাবে এটাকে দেখবে।” নন্দিনী ইশানকে বলে, “এখন যেহেতু মাধুরী আন্টি তোমাকে মেনে নিয়েছেন, তোমাদের সম্পর্ককে মজবুত করার সময় এসেছে। কিন্তু মনে রেখো, সমাজে তোমাদের লড়াইটা সহজ হবে না। আমরা এর জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে।” মাধুরী একটু চিন্তিত স্বরে বললেন, “তোমরা দুজন তরুণ, কিন্তু আমি কীভাবে এই লড়াইয়ে টিকে থাকব? সমাজের প্রতিটি মানুষ আমাদের বিরুদ্ধে প্রশ্ন তুলবে। আমি জানি না, আমরা কীভাবে এটা সামলাব।” ইশান তার হাত চেপে ধরে বলল, “আপনার শক্তিই আমার শক্তি। আমি জানি, সমাজ কঠিন হবে, কিন্তু আমরা একসঙ্গে থাকলে কোনো কিছুই অসম্ভব নয়।” নন্দিনী মুচকি হেসে বলল, “তোমরা দুজনের সাহসই এই লড়াইয়ের ভিত্তি। কিন্তু আমাদের কিছু কৌশল দরকার। আমরা কীভাবে সমাজের সামনে নিজেদের ভালোবাসা সঠিকভাবে তুলে ধরব, তা ঠিক করতে হবে।” মা ছেলের ভালোবাসার সম্পর্ক নিয়ে সমাজের কঠিন প্রশ্ন তারা তিনজন মিলে সম্ভাব্য প্রশ্নগুলো নিয়ে আলোচনা শুরু করলেন:
- বয়সের পার্থক্য: মাধুরী বলে, “সবাই প্রথমেই আমাদের বয়স নিয়ে কথা বলবে। আমি কীভাবে তাদের বোঝাব যে ভালোবাসা বয়স দেখে হয় না?” নন্দিনী উত্তর দেয়, “তাদের বোঝানোর দরকার নেই। আমাদের শুধু আমাদের ভালোবাসার দৃঢ়তা দেখাতে হবে। সমাজ ধীরে ধীরে বুঝবে।”
- পরিবারের অন্যান্যদের অসম্মতি: ইশান বলে, “আমাদের পরিবারের কেউ কি আমাদের এই সম্পর্ক মেনে নিবে? তাদের সমর্থন ছাড়া আমরা কি এগোতে পারব?” নন্দিনী বলে, “তাদেরকে সময় দাও। তারা এই সিদ্ধান্তে হয়তো প্রথমে ভরসা করবে না, কিন্তু তোমাদের প্রতিজ্ঞা দেখে তারা একদিন তোমার পাশে দাঁড়াবে।”
- সমাজের বিদ্রূপ: মাধুরী বলে, “মানুষ আমাদের নিয়ে যা খুশি বলবে।কারণ আমরা মা ছেলে। মা ছেলেতে এই ধরনের সম্পর্ক হয়না। সমাজ বলো, রাষ্ট্র বলো কেউ এটা মেনে নিবে না। ইশান দৃঢ়ভাবে বলে, “আপনি শুধু আমার ওপর ভরসা রাখুন। আমি সবকিছু সহ্য করব, কিন্তু আপনাকে কখনো একা হতে দেব না।” লড়াইয়ের পরিকল্পনা নন্দিনী তাদের একটি পরামর্শ দেয়, “আমরা কয়েকজন ইন্সেস্ট মতাদর্শে বিশ্বাসী এবং উদার ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলব। তারা আমাদের সমর্থন করতে পারে। এরপর আমরা ধীরে ধীরে আমাদের গল্পটা সমাজের সামনে তুলে ধরব।” মাধুরী একটু কাঁপা কাঁপা স্বরে বললেন, “তাহলে কি আমরা এই লড়াইয়ে সত্যিই জয়ী হতে পারব?” ইশান মুচকি হেসে বলে, “জয়-পরাজয় বড় কথা নয়, মাধুরী। বড় কথা হলো, আমরা একসঙ্গে লড়াই করছি। এটাই আমাদের সম্পর্কের সবচেয়ে বড় শক্তি।” নন্দিনী এক কাপ চা হাতে নিয়ে জানালার পাশে দাঁড়িয়ে ইশান আর মাধুরীর দিকে তাকিয়ে ছিল। তাদের সম্পর্ক নিয়ে যে সমাজের সামনে দাঁড়ানোর কথা ভাবা হচ্ছিল, নন্দিনী হঠাৎ সেই ভাবনাটাই বদলে ফেলে। “তোমরা সমাজকে বোঝানোর জন্য সময় নষ্ট করবে কেন? ভালোবাসা কখনো প্রমাণের বিষয় নয়। তোমাদের যা করতে হবে, তা হলো নিজেদের ভালোবাসার সম্পর্কটাকে নিজেদের মতো করে চালিয়ে যাওয়া,” নন্দিনী শান্ত কণ্ঠে বলল। ইশান অবাক হয়ে বলে, “তাহলে আমরা সবকিছু গোপন রাখব?” নন্দিনী মাথা নাড়ল। “গোপন রাখবে না, তবে দেখাতেও যাবে না। মানুষ যা জানে না, তা নিয়ে বেশি কিছু করতে পারে না। তোমরা নিজেদের মতো করে ভালো থাকো। সমাজের জন্য অপেক্ষা করা বৃথা।” মাধুরী নন্দিনীর কথাগুলো শুনে কিছুটা স্বস্তি পেলেন। এতদিন তিনি সমাজের চাপ নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন। কিন্তু নন্দিনীর সহজ কথাগুলো যেন তার মনে সাহস এনে দিল। “তাহলে আমরা আর কাউকে কিছু বলব না। ইশান, আমাদের সম্পর্কটা আমাদের মতো করেই থাকুক। তবে তুমি জানো, এ পথে অনেক চ্যালেঞ্জ আসবে,” মাধুরী বললেন। ইশান দৃঢ়ভাবে মাধুরীর দিকে তাকিয়ে বলল, “আপনি শুধু আমার পাশে থাকুন। আমি সবকিছু মেনে নেব, সবকিছুর মোকাবিলা করব। আপনার ভালোবাসার জন্য আমি সব কিছু করতে পারি।” তারা ধীরে ধীরে নিজেদের সম্পর্কের আড়ালে নতুন একটি সম্পর্ক তৈরি করল। সমাজের চোখে সাধারণ সম্পর্ক ধরে রাখার চেষ্টা। একে অপরের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ শুধু নির্জনে, যেখানে কেউ দেখতে পাবে না। পরিবারের সামনে একে অপরকে সম্মান দেওয়া, যেন তারা কোনো সন্দেহ না করে। মাধুরী মাঝে মাঝে নিজেকে দোষ দিতেন। “আমি কি তোমার জীবনের প্রতি অন্যায় করছি, ইশান?” ইশান সবসময় হাসি দিয়ে বলত, “মা, আপনার সঙ্গে থাকা মানেই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ন্যায্যতা।” গোপন সম্পর্কের গভীরতা তারা একে অপরের সঙ্গে আরও বেশি সময় কাটাতে শুরু করল। ইশান মাঝে মাঝে মাধুরীর হাত ধরে বলত, “আমাদের ভালোবাসার পথটা হয়তো অন্যদের মতো সহজ নয়। কিন্তু এটা আমাদের নিজেদের পথ। আপনি কি আমার সঙ্গে সারাজীবন থাকতে পারবেন?” মাধুরী তার হাত ধরে মৃদু হাসি দিয়ে বলতেন, “তোমার সাহসটাই আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছে, ইশান। আমি সবসময় তোমার পাশে থাকব।” ইশান আর মাধুরী তাদের গোপন সম্পর্কের মধ্যে এক নতুন ছন্দ খুঁজে পায়। দিনের আলোতে তারা সমাজের চোখে স্বাভাবিক আচরণ করত, কিন্তু রাতের নীরবতায় তাদের ভালোবাসা গভীরভাবে প্রকাশ পেত। একদিন সন্ধ্যায়, নন্দিনী ইশানের ঘরে এসে বলে, “তোমরা দুজনই খুব সাবধান। কিন্তু ইশান, এই গোপনীয়তা তোমাদের জন্য কতটা দীর্ঘস্থায়ী হবে? কোনো ভুল হলে সমাজের চোখে ধরা পড়তে খুব বেশি সময় লাগবে না।” ইশান কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল, “তুমি ঠিক বলেছ, নন্দিনী। কিন্তু আমরা আর কোনো বিকল্প দেখছি না। ভালোবাসা প্রকাশ করলে সমাজ তা মেনে নেবে না, আর লুকিয়ে থাকলে ভয় সবসময় পিছু নেবে। আমাদের এই দ্বন্দ্বের মধ্যেই থাকতে হবে।” ইশানের মনে তখন এক নতুন দ্বন্দ্ব শুরু হয়। মাধুরীর প্রতি তার ভালোবাসা যেমন গভীর, তেমনই এই সম্পর্ক নিয়ে তার দুশ্চিন্তাও কম নয়। এক রাতে, মাধুরী ইশানের মনোভাব বুঝতে পেরে জিজ্ঞেস করেন, “তোমার চোখে যে দুশ্চিন্তা, তা কেন? আমি কি তোমার জন্য বোঝা হয়ে গেছি?” ইশান চমকে উঠে বলে, “আপনি আর কোনদিন এ ধরনের কোন কথা বলবেন না, মা। আপনি আমার সবকিছু। আমি শুধু ভাবছি, আমাদের ভালোবাসাকে কীভাবে আরও সুরক্ষিত করা যায়।” মাধুরী মৃদু হাসি দিয়ে বলে, “ভালোবাসা কোনোদিন সুরক্ষিত করার প্রয়োজন হয় না, ইশান। ভালোবাসা হলো বিশ্বাস। তুমি যদি বিশ্বাস রাখো, তাহলে আর কোনো কিছুই প্রয়োজন নেই।” নন্দিনী সবসময় তাদের পাশে ছিল। তাদের জন্য ছোটখাটো পরিকল্পনা করত, যাতে তারা নিজেদের সম্পর্ক আরও সুন্দরভাবে বজায় রাখতে পারে। একদিন নন্দিনী মাধুরীকে বলে, “আপনি ইশানের জন্য শুধু একজন ভালোবাসার মানুষ নন। আপনি তার জীবনের সবচেয়ে বড় প্রেরণা। আপনাকে শক্ত থাকতে হবে।” মাধুরী নন্দিনীর কথা শুনে তার হাত চেপে ধরে বলে, “তোমার মতো একজন বন্ধু ছাড়া আমাদের এই লড়াই অসম্ভব হয়ে যেত। তুমি সবসময় আমাদের পাশে থেকো।” নন্দিনী মুচকি হেসে বলে, “তোমাদের ভালোবাসার জন্য আমি সবসময় আছি। তবে তোমরা সাবধান থেকো। সমাজের চোখ খুব তীক্ষ্ণ।” একদিন বিকেলে, মাধুরী আর ইশান বসে চা খাচ্ছিল। নন্দিনী তাদের কাছে এসে বলল, “তোমরা দুজনই এমন খুঁতখুঁতে, মনে হয় ছোট ছোট শিশুদের মতো খুনসুটি করছো। কখনো ভাবো, বাইরের লোক কীভাবে দেখে?” মাধুরী মুচকি হেসে বলেন, “নন্দিনী, বাইরে লোক কীভাবে দেখবে সেটা আমার কিছুই আসে যায় না। আমি তো শুধু ইশানের সঙ্গে থাকতে ভালোবাসি।” ইশান অবাক হয়ে মাধুরীর দিকে তাকিয়ে বলে, “আসলে মা তো একেবারে শিশুর মতো। কিছু বললেই বলে, ‘ও আমাকে ভালোবাসে, আমি তাকে ভালোবাসি,’ কোনো ভয় বা চিন্তা নেই। এমনকি, মা হয়ে থেকেও বেশ আদুরে।” মাধুরী হাসি থামিয়ে ইশানকে ঠেল দিয়ে বলে, “তুমি নিজেও তো শিশু! তোমার একটা ছোট্ট ভুলে মাথার ওপর একটা ছোট্ট রাগ ঝড়ে যায়, আর তারপর আমাকে নিয়ে খুনসুটি করছো।” নন্দিনী হাসতে হাসতে বলে, “দেখো, আমি যেটা বলছি তা হলো, তোমরা দুজনই এমন একটা সম্পর্ক তৈরি করেছো, যে সম্পর্ক মা-ছেলের এবং প্রেমিক-প্রেমিকার মতো সুন্দর। এমন সম্পর্ক দেখতে পাওয়াটাও বিরল।” ইশান একটু বিরক্তি নিয়ে বলে, “তোমার কি মনে হয়, মা আমাকে ‘ভালোবাসি’ বললেই সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে?” মাধুরী মুচকি হেসে বললেন, “ইশান, তুমি জানো না। কিছু মানুষ থাকে, যারা ভালোবাসা প্রকাশ করতে পারলেও সেটাকে বিশ্বাস করে না। তোমার মতো তো আমি সবসময় বিশ্বাস করতে পারি। তুমি যখন একটা হাসি দিলে, তখন আমি জানি তুমি ঠিক আছো।” ইশান মৃদু হাসে, “তুমি জানো না, মা, কখনো কখনো আমি তোমার মতো কাউকে চুমু খেতে চাই, শুধু তোমার হাসির জন্য।” মাধুরী একটু লজ্জিত হয়ে মাথা নামিয়ে দেয়, “ওহ, তুমি আবার কি বলছো? এমন কথা বললে আমি কি করব?” নন্দিনী হেসে উঠে বলে, “তোমরা দুজনের মধ্যেই আমি কমেডি দেখতে পাচ্ছি! একে অপরকে এত ভালবাসলেও কখনো মাকে ছেলে হিসেবে, কখনো প্রেমিক হিসেবে দেখছো! কি সুন্দর!” মাধুরী চোখ পাকিয়ে নন্দিনীকে বললেন, “তুমি যদি আমাদের সম্পর্ক নিয়ে আরও কথা বলো, তাহলে বুঝবে কে কোথায় দাঁড়িয়ে আছে।” ইশান মৃদু হাসে এবং মাধুরীকে কোলে তুলে বলে, “তুমি কি কখনো জানবে না, আমি তোমাকে কতটা ভালোবাসি?” মাধুরী নীরবে মাথা ঝাঁকিয়ে বললেন, “এত ভালোবাসা দেখিয়ে তুমি কিন্তু আমার কাজটা বাড়িয়ে দিচ্ছো।” এই সময়, নন্দিনী হঠাৎ বলে ওঠে, “ওহ, আমি তো ভুলেই গেছি! তোমাদের খুনসুটির মধ্যে দিয়ে একটা ব্যাপার ঠিক করতে হবে। তোমরা দুজন কি আসলেই একে অপরকে খুব ভালোবাসো?” ইশান মুচকি হেসে বলল, “যতক্ষণ মা আমার পাশে আছে, আমি একে অপরকে ভালোবাসতে পারব। আমি তো জানি, মাই আমার জন্য সবকিছু।” মাধুরী তার দিকে মিষ্টি করে তাকিয়ে বললেন, “তুমি সব সময় এটা বলো, ইশান। কিন্তু আমাকে কখনো ছাড়তে পারবে না, তাই না?” এভাবে তাদের খুনসুটি চলতে থাকে, এবং নন্দিনী মাঝে মাঝে হাসতে হাসতে বলে, “এভাবেই ভালোবাসা জীবনকে মধুর করে তোলে।” এর মধ্যেই হঠাৎ নন্দিনী বলে, “তোমরা যদি সত্যিই একে অপরকে এতটা ভালোবাসো, তাহলে এক কাজ করো—বিয়ে করে ফেলো।” ইশান এবং মাধুরী দুজনেই হতবাক হয়ে যায়। ইশান প্রথমেই বলে, “বিয়ে! কিন্তু আমরা কীভাবে? এটা তো অসম্ভব। সবাই জানলে বড় বিপদ হবে।” নন্দিনী তার কথার মাঝেই বলে, “তোমাদের ভালোবাসা যদি সত্য হয়, তবে এটাকে সামাজিকভাবে বৈধ করার জন্য বিয়েটাই একমাত্র উপায়। আমাদের তিনজন ছাড়া আর কেউ জানবে না। চুপচাপ বিয়েটা সেরে নিও। আর কিছু দরকার হলে আমি আছি।” মাধুরী ধীরে ধীরে বলে, “নন্দিনী, এটা কি ঠিক হবে? আমাদের সম্পর্ক তো এমনিই অনেক জটিল।” নন্দিনী মুচকি হেসে বলে, “জটিলতা মেটানোর জন্যই এই সমাধান। আর তোমার কোনো চিন্তা নেই। আমি সবকিছু সামলে নেব। শুধু তোমাদের হাসিমুখটা দেখতে চাই।” বিয়ের দিন ঠিক হওয়ার পর নন্দিনী হঠাৎ একটি বিষয় নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়ে। সে মাধুরী ও ইশানকে ডেকে বলে, “ইশান, তোমার সব আইডি কার্ড আর নথিপত্রে মাধুরীর নাম মায়ের জায়গায় উল্লেখ করা আছে, তাই তো? তাহলে লিগ্যালি তোমাদের বিয়ে করা সম্ভব হবে না। এটা একটা বড় সমস্যা।” ইশান অবাক হয়ে বলে, “তুমি ঠিক বলছ, নন্দিনী। এটা তো আমার মাথায় আসেনি! কিন্তু এই সমস্যা কিভাবে সমাধান করব?” মাধুরী গভীর চিন্তায় ডুবে বলেন, “এই সমস্যার সমাধান করতে হলে আইনত আমার নাম সেই স্থান থেকে সরাতে হবে। কিন্তু সেটা সহজ কাজ নয়। অনেক নথি সংশোধন করতে হবে।” নন্দিনী দৃঢ় স্বরে বলে, “কিছুই অসম্ভব নয়। আমি আমার পরিচিত একজনের সঙ্গে কথা বলব। সম্ভবত একটি নথিপত্রের মাধ্যমে এই সংশোধন করা যাবে।” পরদিন ইশান ও নন্দিনী একজন পরিচিত আইনজীবীর সঙ্গে দেখা করে। আইনজীবী বলেন, “এটা একটু জটিল, তবে অসম্ভব নয়। মাধুরী যদি নিজের তরফ থেকে একটি হলফনামা দেন এবং ইশানের পিতামাতার নামের জায়গায় সংশোধনের আবেদন করেন, তাহলে এটা সম্ভব হতে পারে। তবে এতে কিছু সময় লাগবে।” ইশান তৎক্ষণাৎ বলে, “ যত সময় লাগুক আমরা অপেক্ষা করব। আমি চাই আমাদের সম্পর্ক লিগ্যাল এবং সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হোক।” কয়েক সপ্তাহের প্রক্রিয়ার পর ইশান তার সব নথিতে সংশোধন করতে সক্ষম হয়। নন্দিনী পুরো প্রক্রিয়া তদারকি করে এবং প্রতিটি পদক্ষেপে ইশান ও মাধুরীকে সাহস যোগায়। ঈশান এবং মাধুরী বিয়ের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। ঘরের পরিবেশ ছিল আনন্দমুখর, তবে কিছুটা শঙ্কিতও। মাধুরী ঈশানকে দেখে হাসলেন, “তুমি খুব উত্তেজিত মনে হচ্ছো।” ঈশান হেসে বলল, “হ্যাঁ, আমি জানি, আজকের দিনটা আমাদের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিন।” নন্দিনী এসে তাদের পাশে দাঁড়িয়ে বলল, “এটা নতুন শুরু, নতুন পথ। কিন্তু তোমাদের দুজনের ভালোবাসা আমি জানি, ওটা মধুর।” ঈশান মাধুরীকে দিকে তাকিয়ে বলল, “আজ আমি জানি, তুমি আমার জীবনের সবচেয়ে বড় আশীর্বাদ।” মাধুরী শান্ত স্বরে বললেন, “তোমার জন্য সবকিছু করেছি, ঈশান। আজ তোমার পাশে দাঁড়িয়ে এই নতুন যাত্রা শুরু করতে চাই।” অবশেষে, বিয়ের সময় এসে পৌঁছল। মাধুরী এবং ঈশান একে অপরের দিকে তাকালেন। দুজনের চোখে ছিল এক অপরিসীম ভালোবাসা, তাদের চোখে এক নতুন অঙ্গীকার। মাধুরী ঈশানকে বললেন, “আমি তোমাকে জীবনভর ভালোবাসবো।” ঈশান তার হাত ধরে বলল, “আমিও, মা। তুমি ছাড়া আমি কিছুই না।” নন্দিনী পাশে দাঁড়িয়ে হাসলেন, “এটাই তো মা ছেলের প্রেম, যেখানে দুটি মানুষ একে অপরকে জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ভালোবাসবে।” বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হবার পর, মাধুরী এবং ঈশান একে অপরকে দেখলেন, সেই মুহূর্তে তাদের চোখে কোনো ভয়ের ছাপ ছিল না, বরং একটি শান্তি, বিশ্বাস এবং স্থিরতা ফুটে উঠেছিল। নন্দিনী তাদের দিকে তাকিয়ে বলল, “এখন তোমরা একে অপরের জীবনের অঙ্গীকার হয়ে থাক। এই নতুন জীবন শুরু হওয়া যাক ভালোবাসা, স্নেহ এবং সম্মানের সঙ্গে।” ঈশান মাধুরীর হাত ধরে বলল, “মা এটা শুধুমাত্র শুরু।” মাধুরীও হেসে বললেন, “তাহলে শুরু হোক, ঈশান।” কেমন লাগলো আশা করি কমেন্টে জানাবেন।